Bengali Meaning of Othello ,Discussion on Othello ,Tales From Shakespeare ,Bengali Meaning ,Summary of Othello ,Othello for Class XI,Othello for Class XI WBCHSE

Our Telegram Group

Bengali Meaning of Othello ,Discussion on Othello ,Tales From Shakespeare ,Bengali Meaning ,Summary of Othello ,Othello for Class XI 


Venice 

Brabantio (Rich Senator )

Desdemona (daughter of Brabantio)

Othello  (a Moor  , General)

Othello +Desdemona

Duke of Venice 

Cyprus (Island )

Turks /Turkish 

Cassio (Florentine Soldier )(Lieutenant )

Iago +Emilia


Handkerchief History 

Egyptian Woman>Othello's Mother >Othello>Desdemona 


Bengali Meaning of Othello

বহু কাল আগে ভেনিস শহরে একজন ধনী সেনেটর (সাংসদ) ছিলেন, যাঁর নাম ছিল ব্রাবেনসিও। ডেজডিমোনা নামে তাঁর এক সুন্দরী ও ভদ্র মেয়ে ছিল। নিজের দেশের এবং তারই মতো গায়ের রঙের বহু যুবক ডেজডিমোনার পাণিপ্রার্থী হলেও সে কিন্তু কাউকেই তার উপযুক্ত মনে করত না। এই মহীয়সী নারী মানুষের চেহারা এবং গায়ের রঙের চেয়ে হৃদয়কে বেশি গুরুত্ব দিত। ভালোবাসার জন্য সে এমন একজন মানুষকে বেছে নিল, যে একজন মুর-একজন কালো চামড়ার অভিজাত। এই যুবককে ডেজডিমোনার বাবা গভীরভাবে ভালোবাসতেন এবং প্রায়শই তাকে প্রাসাদে ডেকে পাঠাতেন। এই সম্ভ্রান্ত মুর, ওথেলো, একজন বীর সৈনিক। তুরস্কের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে তার বীরত্বের জন্য তাকে সেনানায়কের পদে উন্নীত করা হয়েছিল। সমগ্র দেশ জুড়ে সে ছিল অত্যন্ত সম্মান ও শ্রদ্ধার পাত্র।



ওথেলো প্রচুর ভ্রমণ করেছিল এবং ডেজডিমোনা তার দুঃসাহসিক অভিযানের বিভিন্ন গল্প শুনতে দারুণ উৎসাহী ছিল। যুদ্ধক্ষেত্র, অবরোধ, প্রতিআক্রমণ, যেসব বিপদের সম্মুখীন সে হয়েছে, পরিখায় ঢোকার সময় অল্পের জন্য সে কীভাবে বেঁচে ফিরেছে, কিংবা কামানের গোলার দিকে বুক চিতিয়ে এগিয়ে গেছে এবং দাম্ভিক শত্রুর হাতে কীভাবে সে বন্দী হয়েছিল, তারা কীভাবে তাকে দাস হিসেবে বিক্রি করে দিয়েছিল, ওই অবস্থায় সে কীভাবে নিজের আত্মমর্যাদা হারিয়ে ফেলেছিল এবং কীভাবেই বা সে সেখান থেকে পালাতে পেরেছিল-এইসব অভিজ্ঞতা থেকেই ওথেলো তার গল্পের রসদ সংগ্রহ করেছিল। ডেজডিমোনা অত্যন্ত মনোযোগের সাথে এই সমস্ত ঘটনা শুনত এবং বিদেশে ওথেলোর দেখা অদ্ভুত বিষয়গুলি যেমন- বিস্তৃত উষর প্রান্তর, রূপকথার মতো গিরিগুহা, খাত ও খনি, পাহাড় ও গগনচুম্বী পর্বত, আদিম জাতি, নরখাদক মানুষ এবং আফ্রিকার নরমাংসভোজী রাক্ষস, যাদের কাঁধের নীচে মাথা তৈরি হয়- ইত্যাদি সম্পর্কে মন্তব্য করত। এইসব গল্প ডেজডিমোনাকে এতই প্রলুব্ধ

করত যে বাড়ির কোনো কাজের জন্য তাকে যেতে হলে, সে যত দ্রুত সম্ভব কাজগুলি সম্পূর্ণ করে ওথেলোর কাছে ফিরে আসত আর লোভীর মতো কান পেতে ওথেলোর কথা শুনত। গল্পের শেষে ডেজডিমোনা সর্বদাই দীর্ঘশ্বাস ফেলত। তারপর তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলত যে ওথেলোর কোনো বন্ধু যদি ডেজডিমোনাকে ভালোবাসে, তবে ওথেলো শুধু তাকে গল্প বলার কৌশল শিখিয়ে দিলেই সে ডেজডিমোনার মন জয় করে নেবে। এর চেয়ে সরাসরি, নম্র ও সলজ্জ ভাবে আর বলা যায় না। এইটুকু আভাসেই ওথেলো ব্যাপারটি না বুঝে পারেনি এবং সে আরও সরাসরি তার ভালোবাসার কথা জানাল। এইভাবেই সে বিবাহের জন্য সুন্দরী ও সহৃদয়া ডেজডিমোনার সম্মতি লাভ করল।


যদিও গোপনে ধর্মীয় রীতি মেনে তাদের বিবাহ হয়েছিল, তবু বেশি দিন তা গোপন রাখা গেল না। যখন খবরটি ব্রাবেনসিওর কাছে পৌঁছোল, তিনি ভেনিসের ডিউকের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন এবং ওথেলোর বিরুদ্ধে মন্ত্রতন্ত্র ও ডাকিনীবিদ্যার প্রয়োগ দ্বারা শান্ত ডেজডিমোনাকে লোভ দেখিয়ে তার মন জয় করার ও তার পিতার সম্মতি ছাড়াই তাকে বিবাহ করার অভিযোগ জানিয়ে ন্যায়বিচার চাইলেন।


ইতিমধ্যে ভেনিস রাজ্যে ওথেলোকে বিশেষ দরকার হয়ে পড়ল। ভেনিসের সংসদ খবর পেয়েছিল যে তুরস্ক জোরদার প্রস্তুতি নিয়ে যুদ্ধের জন্য রণতরী সাজিয়ে ভেনিসের লোকেদের কাছ থেকে সাইপ্রাস পুনর্দখল করার জন্য সাইপ্রাস দ্বীপের দিকে এগিয়ে আসছে। এই আপৎকালীন সময়ে ওথেলোই ছিল সবচেয়ে যোগ্য সেনানায়ক, যে তুরস্কের এই আক্রমণ থেকে সাইপ্রাসকে রক্ষা করতে পারে। সুতরাং ওথেলোকে সংসদে ডেকে পাঠানো হল। তাকে সেনেটে ডেকে পাঠানো হল একটি বিশিষ্ট ও সম্মানীয় কাজের যোগ্য ব্যাস্ত হিসেবে এবং সেই সঙ্গে একজন অভিযুক্ত হিসেবে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন সাংসদ ব্রাবেনসিও।


সংসদের সদস্যরা খুবই ধৈর্য ধরে প্রবীণ সাংসদের কথা শুনলেন এবং ক্রোধান্বিত পিতা সাঙ্ঘাতিক রেগে গিয়ে ওথেলোকে অভিযুক্ত করলেন। সুতরাং যখন ওথেলোকে তার আত্মপক্ষ সমর্থন করতে বলা হল, সে এত সহজ সুন্দর উপায়ে তার সরল ভালোবাসার কথা বলল যে ডিউক পর্যন্ত স্বীকার করলেন যে এভাবে বলা কোনো কাহিনি তাঁর মেয়ের মনও জয় করে নিত। ওথেলো তাঁর প্রণয়ের সময়ে যে জাদু এবং ইন্দ্রজাল ব্যবহার করেছে তা প্রেম নিবেদনের সৎ শিল্প এবং একজন নারীর হৃদয় জিতে নেওয়ার জন্য যে জাদুবিদ্যা সে প্রয়োগ করেছে, তা আসলে একটা মিষ্টি গল্প বলার পারদর্শিতা।


বিচারসভায় উপস্থিত হয়ে ডেজডিমোনা ওথেলোর বক্তব্য সমর্থন করল এবং স্বীকার করল যে তার (ডেজডিমোেনার) জীবন ও শিক্ষার জন্য সে ব্রাবেনসিওর প্রতি কর্তব্যকর্মে আবদ্ধ। কিন্তু এখন তাকে তার প্রেমিক ও স্বামী ওথেলোর জন্য এক বৃহত্তর কর্তব্য পালন করতে হবে, ঠিক যেমনভাবে বহু বছর আগে তার মা কর্তব্য পালন করেছিলেন ব্রাবেনসিওকে নিজের পিতা অপেক্ষা অধিক গুরুত্ব দিয়ে স্বামী হিসেবে পছন্দ করে। ব্রাবেনসিও তাঁর অভিযোগ টিকিয়ে রাখতে না পেরে মুরকে তাঁর জামাই হিসেবে মেনে নিলেন এবং তাকে বললেন যে তিনি তাঁর মেয়েকে ভুলে থাকার ঐকান্তিক চেষ্টা করবেন। তিনি এই বলে সন্তোষ প্রকাশ করলেন যে তাঁর আর কোনো সন্তান নেই, নচেৎ ডেজডিমোনার এই ব্যবহার হয়তো তাঁকে স্বেচ্ছাচারী করে তুলত এবং তিনি হয়তো তাদেরকে পরিত্যাগ করতেন। তিনি ওথেলোকেও সাবধান করে দিলেন যে, ডেজডিমোনা তার বাবাকে ঠকিয়েছে এবং সে হয়তো ওথেলোকেও ঠকাতে পারে।

বিচারের পর ওথেলো ততক্ষণাৎ ডেজডিমোনাকে সাথে নিয়ে সাইপ্রাসে যুদ্ধে চলে গেল। কারণ সে (ডেজডিমোনা) একমুহূর্তও আর তার বাবার সাথে থাকতে রাজি নয়। সে দীপ্ত কণ্ঠে বলল, "আমি ওই মুরের সাথে জীবন কাটাব বলেই তাকে ভালোবেসেছি।" সুতরাং সদ্যবিবাহিত দম্পতি সাইপ্রাসের উদ্দেশে নৌযাত্রা শুরু করল। কিন্তু সাইপ্রাসে পৌঁছোনোমাত্র খবর এল যে এক ভয়ংকর ঝড়ে তুরস্কের নৌবহর ছত্রখান হয়ে গেছে। অতএব দ্বীপটি এখন সুরক্ষিত। কিন্তু ওথেলোকে ভোগাবে যে যুদ্ধ তা সবে শুরু হতে চলেছিল। আর সেই যুদ্ধে শত্রুপক্ষ হল ওথেলোর মনে ডেজডিমোনা সম্পর্কে গড়ে ওঠা বিদ্বেষ, আর তা ছিল বহিঃশত্রু বা বিধর্মীদের চেয়েও ভয়ংকর।


ওথেলোর বন্ধুদের মধ্যে ক্যাসিওর মতো বিশ্বস্ত আর কেউ ছিল না। সে ছিল ফ্লোরেন্সের এক তরুণ যোদ্ধা, তার প্রেমপূর্ণ, মনোমুগ্ধকর স্বভাব সহজেই মহিলাদের আকর্ষণ করত। সে সুদর্শন এবং বাকপটু। যে-কোনো বয়স্ক বিবাহিত লোক, যাঁর যুবতী সুন্দরী স্ত্রী আছে, এই ধরনের ব্যক্তিকে নিয়ে তটস্থ থাকতেন। শুধু ওথেলোই ছিল ব্যাতিক্রম। কারণ সে নিজে ঈর্ষামুক্ত ও উদার মনের মানুষ হওয়ায় ক্যাসিওকে বিশ্বাসঘাতক হিসেবে সন্দেহ করা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। ডেজডিমোনার সাথে প্রেমপর্বে সে প্রায়শই ক্যাসিওকে কাজে লাগত। কারণ তার আশঙ্কা ছিল যে ক্যাসিওর মতো মহিলাদের মুধ করার ক্ষমতা তার নেই। সে ক্যাসিওকে দায়িত্ব দিত তার হয়ে ডেজডিমোনার কাছে প্রেম নিবেদন করতে। ওথেলোর এই নিষ্পাপ মনোভাব তার বীরোচিত চরিত্রে দোষারোপের পরিবর্তে তার চরিজকে আরও সম্মানিত করেছিল। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে শাশু ডেজডিমোনা ওথেলোর পরেই ক্যাসিওকে বিশ্বাস করত এবং ভালোবাসত। সুতরাং, বিবাহের পরেও ক্যাসিওর সাথে এই দম্পতির সম্পর্কে তেমন পরিবর্তন হল না। ক্যাসিও মাঝে মাঝেই ওথেলোর বাড়িতে আসত এবং তার খোলামেলা ও অনর্গল মজার মজার কথাবার্তা গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ ওথেলো পছন্দই করত।


ওথেলো মাত্র কিছুদিন আগে ক্যাসিওকে লেফটেন্যান্ট পদে বসিয়েছিল, যে পদ সেনানায়কের খুব কাছের এবং বিশ্বাসেরও বটে। এই পদোন্নতি ইয়াগো নামের এক প্রবীণ অভিজাতকে অত্যন্ত ক্রুদ্ধ করেছিল। কারণ ইয়াগোর মনে হয়েছিল যে, তার দাবি ক্যাসিওর চেয়ে বেশি ন্যায়সম্মত। সে মাঝেমধ্যেই ক্যাসিওকে বিদ্রুপ করে বলত যে, সে নারীসঙ্গ লাডেরই বেশি - উপযুক্ত, কারণ যুদ্ধবিদ্যার কলাকৌশল তার বিশেষ জানা নেই। ক্যাসিওর প্রতি পক্ষপাতিত্বের জন্য এবং সেই সঙ্গে ইয়াগোর স্ত্রী এমিলিয়ার প্রতি অতিরিক্ত আসক্স-এই অহেতুক সন্দেহের বশেও সে ওথেলোকে ঘৃণা করত। এই মনগড়া প্ররোচনা থেকে ইয়াগো এমন এক প্রতিশোধের পরিকল্পনা করল যার ফলে ক্যাসিও, ওথেলো ও ডেজডিমোনা একসাথে সংকটে পড়বে।


ইয়াগো ধূর্ত লোক ছিল। সে মানুষের মন গভীরভাবে অনুধাবন করতে • পারত। সে জানত সব ধরনের যন্ত্রণার মধ্যে যে যন্ত্রণা মানুষকে সর্বাধিক  উৎপীড়িত করে, তা হল ঈর্ষার যন্ত্রণা, যা অসহ্য এবং যার দংশন গভীরতম ও ক্ষত সৃষ্টি করে। সে ভাবল, যদি সে ওথেলোকে ক্যাসিওর প্রতি ঈর্ষান্বিত করতে পারে তাহলে দারুণ এক প্রতিশোধের ষড়যন্ত্র করা যাবে, যা শেষ পর্যন্ত ক্যাসিও বা ওথেলো, বা দুজনেরই মৃত্যুতে চূড়ান্ত পরিণতি পাবে, যাতে তার কিছুই খাবে আসবে না।


সাইপ্রাসে সেনানায়ক এবং তাঁর স্ত্রীর উপস্থিতি এবং শত্রুবাহিনীর ছত্রভঙ্গ হয়ে যাবার খবর এসে পৌঁছোলে দ্বীপজুড়ে এক ধরনের ছুটির আমেজের সৃষ্টি হয়েছিল। প্রত্যেকে ভোজ এবং আমোদপ্রমোদে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। সেই রাতে সৈনারা যাতে অতিরিক্ত মদ্যপান না করে তা নজরদারি করার দায়িত্ব ওথেলো ক্যাসিওকে দিল। সেই রাতেই ইয়াগো তার শয়তানি-ভরা গভীর ষড়যন্ত্রটি শুরু করল। সেনানায়কের প্রতি বিশ্বাসের ও ভালোবাসার জনিতার আড়ালে সে ক্যাসিওকে মদ্যপান করার ব্যাপারে প্রলুব্ধ করল, প্রহরার দায়িত্বে থাকা আধিকারিকের পক্ষে যা ভীষণ অপরাধ। যদিও ক্যাসিও শুরুতে নিজেকে সংযত রেখেছিল, কিন্তু খুব শীঘ্রই সে ইয়াগোর চাতুরির কাছে হেরে গেল। গ্লাসের পর গ্লাস মদ্য পান করে সে মাতাল হয়ে উঠল। ইয়াগোর প্ররোচনায় সে নম্র ডেজডিমোনার প্রশংসা করতে শুরু করল। সে ইয়াগোকে এমনও বলল "ডেজডিমোনার মতো এমন নিখুঁত নারী আর হয় না"। শেষ পর্যন্ত সে এক ধাক্কাধাক্কিতে জড়িয়ে পড়ল। মন্টানো, নামে একজন সুযোগ্য আধিকারিক এই মারপিট থামাতে এসে আহত হয়ে পড়ল। এই অবস্থার সুযোগ নিয়ে ইয়াগো প্রাসাদের ঘন্টা বাজিয়ে সবার মনে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিল, যেন এক ভয়ঙ্কর বিদ্রোহের অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ঘণ্টার শব্দ শুনে ওথেলো তাড়াতাড়ি যুদ্ধের পোশাক পরে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছোল পাছে যুদ্ধ করতে হয় এবং ক্যাসিওকে ঘন্টা বাজানোর কারণ জিজ্ঞাসা করল। এর মধ্যে ক্যাসিও কিছুটা প্রকৃতিস্থ হলেও লজ্জায় কোনো কথা বলতে পারল না। ইয়াগো তখন যেন ওথেলোর দ্বারা বাধ্য হয়ে অনিচ্ছাসত্ত্বেও সত্যি কথাটা বলার ডান করল। পুরো ঘটনাটা সে এমনভাবে উপস্থাপন করল যেন তাতে মনে হয় সে ক্যাসিওর অপরাধ লঘু করার চেষ্টা করছে, কিন্তু আসলে তা প্রকৃত দোষের চাইতে অনেক বেশি করে দেখাল। ওথেলো, যে কিনা নিয়মানুবর্তিতাকে কঠোর ভাবে মেনে চলত, বাধ্য হল ক্যাসিওর কাছ থেকে সহকারীর পদটি কেড়ে নিতে। এইভাবে ইয়াগোর প্রথম পরিকল্পনা সফল হল। সে তার ঘৃণ্য শত্রু ক্যাসিওকে হীন প্রতিপন্ন করল এবং তাকে তার পদ থেকে সরিয়ে দিতে সফল হল।


ক্যাসিও, যার দুর্ভাগ্য তাকে অনেকটাই সংযত করেছে, এখন তার বন্ধু সাজা ইয়াগোর কাছে দুঃখ করল:"সম্মান, সম্মান, সম্মান। হায় আমি আমার সম্মান নষ্ট করে ফেলেছি। আমি আমার সম্মান, যা চিরন্তন, তাই হারিয়ে ফেলেছি, আর রয়ে গেছে শুধুমাত্র পাশবিকতা। আমার সম্মান, ইয়াগো আমার সম্মান।" সে নিজেকে ঘৃণা করতে লাগল। সে ভাবতে লাগল কীভাবে সে সেনানায়ককে বলে তার হারানো জায়গা ফিরে পাবে। ইয়াগো তাকে পরামর্শ দিল ডেজডিমোনা মারফৎ তার প্রভুকে (ওথেলোকে) তার নিবেদন জানাতে।


ক্যাসিও ইয়াগোর পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করল। ডেজডিমোনা তাকে কথা দিল যে তার স্বামীর কাছে ক্যাসিওর হয়ে ওকালতি করবে। সে ততক্ষণাৎ ওথেলোর কাছে গিয়ে এমন ঐকান্তিক ও সুন্দরভাবে ক্যাসিওর কথা বলল যে ওথেলো, যে নাকি ক্যাসিওর ওপর মারাত্মক অসন্তুষ্ট ছিল,ডেজডিমোনাকে ফিরিয়ে দিতে পারল না। যখন সে এত দ্রুত এই ধরনের অপরাধীকে ক্ষমা করা উচিত নয় এই যুক্তি দেখিয়ে দেরি করার কথা বলল, ডেজডিমোনা অনুরোধ করল যে বড়োজোর আগামী রাত বা পরের দিন সকালের মধ্যে তা করতে হবে। তারপর ডেজডিমোনা ওথেলোকে বোঝাল বেচারা ক্যাসিও কতটা অনুতপ্ত ও অপমানিত হয়েছে এবং তার অপরাধ এত বড়ো শাস্তি দাবি করে না। কিন্তু ওথেলো তাতেও রাজি হল না। তখন সে বলল, "হে প্রভু, ক্যাসিওর হয়ে আমাকে এত আবেদন নিবেদন করতে হচ্ছে, কিন্তু এই ক্যাসিওই আপনার হয়ে প্রেম নিবেদন করতে এসেছিল এবং মাঝেমধ্যে যখন আমি আপনার নিন্দা করেছি তখন সে আপনার পক্ষ নিয়েছে। আমি মনে করি, আমি আপনার কাছ থেকে সামান্যই চাইছি। যখন আমি আপনার প্রেমের সত্যিকারের পরীক্ষা নেব তখন আমি আরও পুরুত্বপূর্ণ কিছু চাইব।" ওথেলো এই অনুনয়কে অগ্রাহ্য করতে পারল না। সে ডেজডিমোনাকে আশ্বাস দিল যে মাইকেল ক্যাসিওকে সম্মানের সাথে তার পদে পুর্নবহাল করা হবে কিন্তু কবে, কখন তা তার ওপর ছেড়ে দিতে বলল।


একদিন যে ঘরে ডেজডিমোনা ক্যাসিওর সাথে কথা বলছিল এবং ক্যাসিও তার হয়ে মধ্যস্থতা করার অনুরোধ জানাচ্ছিল হঠাৎ সেই ঘরে ওথেলো আর ইয়াগো প্রবেশ করল। ওথেলো ঘরে প্রবেশ করাতে ক্যাসিও বিপরীত দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল, যা দেখে, সর্বদা শয়তানি বুদ্ধিতে ভরা ইয়াগো ফিসফিস করে, যেন নিজের মনেই বলছে, বলল "আমি এটা একদমই পছন্দ করছি না"। ওথেলো অবশ্য ইয়াগোর এই কথাগুলি খেয়ালই করল না। ডেজডিমোনার সাথে কথোপকথোনের জন্য ওথেলো তখনকার মতো বিষয়টি ভুলে গেল, কিন্তু কিছুক্ষণ বাদে আবার বিষয়টি মনে পড়ল। ডেজডিমোনা সেখান থেকে চলে গেলে ইয়াগো ওথেলোকে জিজ্ঞাসা করল, যেন সে শুধু জেনেই সন্তুষ্ট হবে, ক্যাসিও ওথেলোর সাথে ডেজডিমোনার প্রেমপর্বের কথা জানে কি না। সেনানায়ক সম্মতিসূচক উত্তর দিল এবং আরও বলল যে প্রেমপর্বের সময়ও ক্যাসিও তাদের মধ্যে প্রায়শই উপস্থিত থাকত। ইয়াগো ভুরু উচিয়ে, যেন হঠাৎ করে কোনো ভয়ংকর ঘটনা মনে পড়ে গেছে এমন ভাব দেখিয়ে বলল, "তাই তো বলি!" এটি ওথেলোকে ঘরে ঢোকার সময় ইয়াগোর বলা কথাটা মনে করিয়ে দিল। অতএব সে ভাবতে শুরু করল যে ডেজডিমোনার সাথে ক্যাসিওর যে একান্ত আলাপচারিতা চলছিল তার নিশ্চয় কোনো আলাদা অর্থ আছে। ওথেলো ভাবল যে ভালোবাসা ও সততায় ওরা ইয়াগো একজন ন্যায়পরায়ণ মানুষ। সুতরাং সে ইয়াগোকে অনুরোধ করল যে সে যা জানে তা যেন খুলে বলে। "কিন্তু কী হবে," ইয়াগো বলল, "যদি কোনো অনুভ চিত্তা, আমার মনে প্রবেশ করে থাকে?" সে বলতে থাকল যে এটি ওথেলোর পক্ষে খুব দুঃখের হবে যদি তার পর্যবেক্ষণ সঠিক না হওয়ার কারণে কোনো সমস্যার উদ্ভব হয়। সুতরাং ওথেলোর শান্তি বজায় রাখতে ইয়াগোর ভাবনাগুলি না জানাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। কিন্তু ইতিমধ্যে ওথেলোর কৌতূহল চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে এবং ইয়াগো যেন ওথেলোর মনের কত যত্নই না নেয়, এমন ভাব দেখিয়ে তাকে সন্দেহ না করার পরামর্শ দিল। ওথেলোকে

সন্দেহপ্রবণতার থেকে সাবধান করে দেওয়া ছিল ইয়াগোর চাতুরি। "আমি জানি," বলে উঠল ওথেলো, "আমার স্ত্রী সুন্দরী, লোকজন এবং আমোদপ্রমোদ ভালোবাসে, মুক্ত কন্ঠে কথা বলে, গান গায় এবং ভালো নাচতে পারে কিন্তু যেখানে গ্রুপের কথা আসে, এগুলি প্রত্যেকটিই গুণ। সুতরাং আমার স্ত্রীকে অসৎ ভাবার আগে আমার প্রমাণ চাই।" তখন ইয়াগো এমন ভাব করল যে ওথেলো ডেজডিমোনার দোষ ধরতে রাজি না হওয়ায় সে কতই না সুখী হয়েছে, এবং সরাসরি ঘোষণা করল যে তার কাছে কোনো প্রমাণ নেই। সে শুধু ওথেলোকে অনুনয় করল ক্যাসিও কাছে থাকাকালীন যেন সে ডেজডিমোনার আচরখ পর্যবেক্ষণ করে। সে যেন অতিরিক্ত ঈর্ষান্বিত বা নিশ্চিত না হয়ে যায়। ইয়াগো ইতালীয় মহিলাদের মতিগতি ওথেলোর থেকে ভালো জানত। সে জানত যে ভেনিসের মহিলারা সারা পৃথিবীকে তাদের রঙ্গতামাশা দেখাতে পছন্দ করে, কিন্তু সাহস করে তাদের স্বামীদের দেখাতে পারে না। ইয়াগো সুচতুর ভাবে ইঙ্গিত করল যে ডেজডিমোনা ওথেলোকে বিয়ে করার সময় তার বাবাকে বোকা বানিয়েছে এবং এত চালাকির সাথে তা করেছিল যে বুড়ো ব্রাবেনসিও ভেবেছিলেন যে জাদুবিদ্যার প্রয়োগ হয়েছে। ওথেলো এই যুক্তিতে সহজেই আকৃষ্ট হল। সে ভাবল ডেজডিমোনা যদি নিজের বাবার সাথে প্রতারণা করতে পারে, তাহলে সে হয়তো স্বামীর সাথেও প্রতারণা করতে পারে।


ইয়াগো ওথেলোর কাছ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করল তাকে কষ্ট দেবার জন্য। কিন্তু ওথেলো তাকে তার বক্তব্য চালিয়ে যেতে বলল। ইয়াগো এমন ভান করল যে ক্যাসিওর বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ দিতে সে যেন কতই না অনিচ্ছুক। যাইহোক, সে ওথেলোকে মনে করিয়ে দিল কীভাবে ডেজডিমোনা তার নিজের দেশের ও গাত্রবর্ণের বহু যোগ্য পাশিপ্রার্থীকে বাতিল করেছে এবং তাকে (ওথেলোকে) বিয়ে করেছে যা তার পক্ষে অস্বাভাবিক এবং যা প্রমাণ করে ডেজডিমোনার যথেষ্ট জেদ আছে। সুতরাং ভালোমন্দবোধ ফিরে এলে ডেজডিমোনা হয়তো ওথেলোর সাথে তার দেশের সাদা চামড়ার তরুণ ইতালীয়দের তুলনা শুরু করবে। সুতরাং ইয়াগো ওথেলোকে পরামর্শ দিল ক্যাসিওর সাথে তার মিটমাট পর্ব একটু পিছিয়ে দিতে। ইতিমধ্যে ওথেলো যেন লক্ষ রাখে কত ঐকান্তিক ভাবে ডেজডিমোনা ক্যাসিওর হয়ে কথা বলছে। এভাবে বদমাইশি করে ওই বিশ্বাসঘাতক শয়তান তার পরিকল্পনা অনুযায়ী ডেজডিমোনার গ্রুপগুলিকে তার ধবংসের কারণে পরিণত করল এবং ডেজডিমোনার নিজের সম্পূণগুলি থেকেই তাকে ফাঁদে ফেলার জাল তৈরি করল প্রথমত তার (ক্যাসিওর) হয়ে মধ্যস্থতায় রাজি করাতে ক্যাসিওকে (ডেজডিমোনার কাছে) পাঠাল এবং তারপর ওই মধ্যস্থতার ফলে উদ্ভূত অবস্থা অনুযায়ী তার পতনের জন্য কৌশল নির্মাণ করল।

ইয়াগোর সাথে ওথেলোর দীর্ঘ আলাপচারিতা তাকে আরও অস্থির করে তুলল। আফিং বা ম্যানড্রাগোরার রস কিংবা পৃথিবীর সমস্ত ঘুমের ওষুধ তাকে তার তৃপ্তিদায়ক বিশ্রাম (ঘুম) ফিরিয়ে দিতে পারবে না, যা সে গতকাল পর্যন্ত উপভোগ করেছে। নিজের পেশার প্রতি তার অনীহা এসে গেল। অস্ত্রশস্ত্রের ঝনঝনানিতে সে আর কোনো আনন্দ খুঁজে পেল না। তার হৃদয় যা সেনাবাহিনীকে দেখে নেচে উঠত, এখন যুদ্ধবাদ্যের শব্দ বা ঘোড়ার ডাকে তা আর নেচে ওঠে না। সে যেন যোদ্ধার গ্রুপগুলি- আত্মগর্ব এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষা-হারিয়ে ফেলেছে। কখনও তার মনে হতে লাগল যে তার স্ত্রী সৎ। আবার তার মনে হল সে সৎ নয়। একবার তার মনে হল ইয়াগো ন্যায়পরায়ণ, পরক্ষণেই, সে বিপরীতটাও ভাবল। এইভাবে সে এতই বিক্ষিপ্তচিত্ত হয়ে উঠল যে মানসিক ভাবে একেবারে ভেঙে পড়ল। একবার সে ইয়াগোর গলা চেপে ধরে ডেজডিমোনার বিরুদ্ধে প্রমাণ দাবি করল এবং তার সম্বন্ধে মিথ্যাচার করার জন্য ইয়াগোকে তৎক্ষণাৎ মৃত্যুর ভয় দেখাল। ইয়াগো কপট রাগ প্রকাশ করল যেন তার সততাকে, পাপ হিসেবে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। সে ওথেলোকে জিজ্ঞেস করল ওথেলো ডেজডিমোনার হাতে স্ট্রবেরির ছাপ দেওয়া একটা রুমাল দেখেছে কি না এবং ওথেলো বলল যে সেটা তার ডেজডিমোনাকে দেওয়া প্রথম উপহার। "ওই একই রুমাল দিয়ে," ইয়াগো বলল, "আজ আমি দেখেছি মাইকেল ক্যাসিওকে তার মুখ মুছতে"। ওথেলো উত্তর দিল, "আপনি যা বলছেন তা যদি সত্য হয়, যতক্ষণ না আমার ভয়ংকর প্রতিশোধস্পৃহা ওদের দুজনকে গিলে খায়, আমি বিশ্রাম নেব না। প্রথমত, তোমার বিশ্বাসযোগ্যতার প্রতীক হিসেবে তিন দিনের মধ্যে ক্যাসিওকে প্রাণদণ্ডে দণ্ডিত করব; এবং ওই সুন্দরী শয়তানের (ডেজডিমোনা) জন্য, আমি অতি দ্রুত মৃত্যুর ব্যবস্থা


করব।" ওথেলো জিজ্ঞাসা করার প্রয়োজন মনে করল না কীভাবে ক্যাসিয়াস ডেজডিমোনার ওই রুমাল পেয়েছে। সে দুজনকেই মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিল। ডেজডিমোনা কখনোই ক্যাসিওকে এই উপহার দেয়নি, সেই বিশ্বস্ত নারী কখনোই তার স্বামীর সাথে এমন খারাপ কাজ করত না, যে তার স্বামীর জিনিস অন্য লোককে উপহার দিয়ে দেবে। শয়তান ইয়াগো তার স্ত্রী এমিলিয়াকে দিয়ে রুমালটা চুরি করিয়েছিল এবং ক্যাসিও যেই পথে যাবে সেই পথে রুমালটি ফেলে রেখেছিল যাতে ক্যাসিও ওই রুমাল তুলে নেয় আর তার ফলে ইয়াগোর সন্দেহ প্রমাণিত হয় যে ওই রুমালটি ডেজডিমোনার উপহার।



ইয়াগোর সাথে কথাবার্তা হওয়ার পর পরই ওথেলো তার মাথা ধরেছে এমন ভান করল এবং ডেজডিমোনার কাছ থেকে তার রুমালটি চাইল, যাতে সেটা সে তার মাথায় বেঁধে রাখতে পারে। ডেজডিমোনা অন্য রুমাল দিতে গেলে ওথেলো সেই ব্লুমালটিই চাইল, যেটা সে ডেজডিমোনাকে দিয়েছিল। ডেজডিমোনা ব্রুমালটি খুঁজে পেল না। "এটা ঠিক নয়," ওথেলো বলল। "এই রুমালটি আমার যাকে একজন মিশরীয় মহিলা দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন একজন জাদুকরী এবং মানুষের মনের ভাব পড়তে পারতেন। তিনি বলেছিলেন, যতক্ষণ আমার মা রুমালটি কাছে রাখবেন, তিনি সুখে থাকবেন এবং স্বামীসোহাগিনী থাকবেন। কিন্তু যদি তিনি সেটা হারিয়ে ফেলেন বা অন্যকে উপহারস্বরূপ দিয়ে দেন, তাহলে তিনি আমার বাবার ঘৃণার পাত্রী হয়ে উঠবেন।" ডেজডিমোনা জিজ্ঞাসা করল, "এটা কি সম্ভব?” ওথেলো উত্তর দিল, "হ্যাঁ এটা সত্যি। এটি একটি জাদু ব্লমাল।" ডেজডিমোনা ভয়ে মৃতপ্রায় হয়ে গেল। কারণ তার মনে হতে লাগল, সে রুমালটি হারিয়ে ফেলেছে এবং তার ভয় হল এর সাথে সাথে সে তার স্বামীর ভালোবাসাও হারাতে চলেছে। সে ওথেলোর মনকে খারাপ চিন্তা থেকে বের করার চেষ্টা করল। সে মজা করে বলল, এই রুমাল নিয়ে সে যে এত কথা বলল তার একটাই উদ্দেশ্য হল ক্যাসিওর হয়ে আর্জি করার থেকে তাকে (ডেজডিমোনাকে) দূরে রাখা এবং তার প্রশংসা করতে লাগল যতক্ষণ না ওথেলো মানসিকভাবে ভীষণ বিক্ষিপ্ত হয়ে ঘরে ছেড়ে বেরিয়ে গেল। তখন ডেজডিমোনার সন্দেহ হল যে তার স্বামী ক্যাসিওর প্রতি ঈর্ষান্বিত।


ওথেলো ও ডেজডিমোনার যখন আবার দেখা হল, ওথেলো ডেসডিমোনাকে আরও সরাসরি বিশ্বাসভঙ্গ এবং অন্য এক পুরুষকে ভালোবাসার অপরাধে অভিযুক্ত করল। ওথেলো কাঁদতে কাঁদতে ডেজডিমোনাকে বলল যে সে দারিদ্রদ্র্য, অসুস্থতা, সম্মানহানির মতো অন্য সব কিছু খারাপকে সাহসের সাথে সহ্য করতে পারত, কিন্তু ডেজডিমোনার এই বিশ্বাসভঙ্গ তার হৃদয় ভেঙে দিয়েছে। সে ডেজডিমোনাকে এক আগাছার সাথে তুলনা করল, যাকে দেখতে সুন্দর এবং এতই সুগন্ধযুক্ত যে তা বোধশক্তিকে পীড়িত করে। সে এমনও বলল যে ডেজডিমোনার জন্ম না হলেই ভালো হত। ওথেলো চলে গেলে ডেজডিমোনা তার স্বামীর এই অন্যায় সন্দেহে এতটাই বিস্মিত হল যে ঘুমের ভার তার ওপর নেমে এল। সে তার পরিচারিকাকে বলল যে সে যেন তার জন্য শয্যা প্রস্তুত রাখে ও চাদর পেতে দেয়। ডেজডিমোনা আরও বলল যে মানুষ যখন শিশুদের কোনো কিছু শেখায় তার উপায় হয় সহজ এবং তা শেখানো হয় সাধারণ সহজ অনুশীলনের মাধ্যমে। ওথেলো তাকে বকতে পারতেন কারণ সত্যি কথা বলতে কি সে তো শিশুই।


ডেজডিমোনা শীঘ্রই ঘুমিয়ে পড়ল। ওথেলো তার স্ত্রীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার ব্যাপারে মনস্থির করে ফেলেছিল এবং সেই অশুভ উদ্দেশ্যসাধনের জনাই সে ঘরে ঢুকল। যখন ওথেলো ডেজডিমোনাকে ঘুমন্ত অবস্থায় দেখল সে ডাবল যে সে ডেজডিমোনার রক্তপাত ঘটাবে না, কিন্তু ঠিকই করল যে ডেজডিমোনাকেমরতেই হবে, নচেৎ সে বাঁচলে আরও অনেকের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করবে, যেমন সে তার প্রতি করেছে। তারপর ওথেলো শেষ বারের মতো ডেজডিমোনাকে চুম্বন করল এবং কাঁদতে লাগল যদিও সে বলল, এই চোখের জল নিষ্ঠুর।


ডেজডিমোনা ওই চুম্বনের ফলে জেগে উঠল। সে ওথেলোর দিকে তাকিয়ে দেখল সে তার ঠোঁট কামড়াচ্ছে আর তার চোখের দৃষ্টি অস্থির। ডেজড়িমোনা জানত, ওথেলো যখন এমন করে তখন তার ফল হয় খুবই খারাপ। ওথেলো ডেজডিমোনাকে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হতে বলল এবং শেষবারের মতো প্রার্থনা করতে বলল কারণ সে তার আত্মাকে হত্যা করবে না। ডেজডিমোনা ক্ষমা প্রার্থনা করল এবং তার দোষ কী তা জানতে চাইল। তারপর সে ক্যাসিওর নাম উল্লেখ করল, এবং সেই রুমালের কথা বলল যা সে ক্যাসিওকে দিয়েছে বলে বলা হয়েছে, তখন ওই নির্দোষ নারী নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে জানাতে শুরু করেছিল, কিন্তু হঠাৎই ওথেলো আর কিছু শুনতে রাজি না হয়ে ডেজডিমোনাকে বিছানার চাদর দিয়ে জড়িয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করল।


এই সময় ক্যাসিও আহত ও রক্তাক্ত অবস্থায় ভেতরে এসে উপস্থিত হল। ইয়াগো তার একজন অনুচরকে দায়িত্ব দিয়েছিল ক্যাসিওকে হত্যা করতে। কিন্তু সেই ব্যক্তি ক্যাসিওকে হত্যা করতে ব্যর্থ হয়। সত্যিটা যাতে জানাজানি না হয় সেজন্য ইয়াগো লোকটিকে হত্যা করে। তারই পকেটের মধ্যে কিছু চিঠি পাওয়া যায়, যা ইয়াগোর অপরাধ প্রকাশ করে এবং ক্যাসিও যে নির্দোষ তা প্রমাণ করে। এখন ক্যাসিও ওথেলোর কাছে কমা প্রার্থনা করতে এসেছে এবং আরও জানতে এসেছে কী কারণে ইয়াগোকে নিয়োগ করা হয়েছে তাকে (ক্যাসিওকে) হত্যা করার জন্য।


এই আবিষ্কার ওথেলোর কাছে বজ্রপাতের মতো মনে হল। সে এখন বুঝতে পেরেছে যে সে একজন খুনি ছাড়া আর কিছু নয় এবং তার স্ত্রী নির্দোষ এবং বিশ্বস্তই ছিল। চরম মানসিক যন্ত্রণাবোধ তার জীবনকে অসহ্য করে তুলল এবং সে নিজেকে হত্যা করে তার প্রিয়তমা স্ত্রীর প্রাণহীন দেহের ওপর চলে পড়ল।


এই সমস্ত হঠকারী কাজ, উপস্থিত ব্যক্তিদের মনে বীভৎস ভয় ও আবেগের সৃষ্টি করল। ওথেলোর যথেষ্টই খ্যাতি ছিল এবং এক শয়তানের চাতুরিতে আক্রান্ত হবার আগে অবধি সে সত্যিই একজন স্নেহশীল প্রেমিক- স্বামী ছিল। ডেজডিমোনার প্রতি তার ভালোবাসায় যুক্তি না থাকলেও আবেগের প্রাচুর্য ছিল। যখন সে মারা গেল, তার পূর্বেকার গুণগুলি এবং বীরত্বের কাহিনিগুলি সকলে স্মরণ করতে লাগল। ইয়াগোকে চরম যন্ত্রণাসহ কঠিন শাস্তি দেওয়া হল এবং গোটা ডেনিস রাজ্য তাদের বিখ্যাত সেনানায়কের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করতে থাকল।




Comments