Bengali Meaning of Nobel Lecture By Mother Teresa

Bengali Meaning of Nobel Lecture By Mother Teresa


আজ যখন আমরা নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাতে এখানে একত্রিত হয়েছি, আমার মনে হয় যে অ্যাসিসির সন্ত ফ্রানসিস্ রচিত প্রার্থনা যা আমাকে সর্বদা অবাক করে দেয়, তা দিয়ে শুরু করলে খুব সুন্দর হবে। প্রতিদিন হোলি কমিউনিয়নের পর এই প্রার্থনা আমরা সবাই করি কারণ আমাদের প্রত্যেকের কাছে এটি অত্যন্ত যথাযথ আর আমি সর্বদা অবাক হই ভেবে যে চার পাঁচশো বছর আগে অ্যাসিসির সন্ত ফ্রান্সিস যখন এই প্রার্থনা সংগীতটি রচনা করেছিলেন তখন তারা আজ আমাদের মতোই একইরকম কষ্ট যন্ত্রণার মুখোমুখি হয়েছিলেন। আজ আমরা এই প্রার্থনা করি যা আমাদের ক্ষেত্রেও ভালোভাবে প্রাসঙ্গিক। আশা করি, আপনাদের মধ্যে কেউ কেউ এটা বুঝতে পেরে গেছেন তাহলে আসুন আমরা সবাই একসাথে এই প্রার্থনাটি উচ্চারণ করি।


আসুন আমরা ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই, যে সুযোগ আমরা আজকে একসঙ্গে পেয়েছি তার জন্য, কারণ এই শান্তির উপহার যেটা আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয় যে, আমাদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে ওই শান্তির মধ্যে বাস করার জন্য এবং এই ভালো খবরটি গরিব মানুষদের জন্য নিয়ে আসতে জিশু মানবরূপ ধারণ করেছিলেন। তিনি যেহেতু ভগবান তাই সমস্ত দিক থেকে আমাদের মতো মানবরূপ ধারণ করেছিলেন, কেবলমাত্র পাপ ছাড়া এবং তিনি পরিস্কারভাবে ঘোষণা করেছিলেন যে তিনি এসেছিলেন ওই ভালো খবরটি দেওয়ার জন্য। খবরটি ছিল সমস্ত শুভ ইচ্ছাশক্তি সম্পন্ন মানুষের জন্য শান্তি এবং এটি এমন একটি জিনিস-যা আমাদের সকলের প্রয়োজন। হৃদয়ের শান্তি এবং ঈশ্বর এ পৃথিবীকে এত ভালোবাসতেন যে তিনি তাঁর সন্তানকে দিলেন। এটা ছিল এক উপহার - এটা এতদূর বলা যায় যে, এই দেওয়া ঈশ্বরকে যন্ত্রণা দিয়েছিল, কারণ তিনি এই পৃথিবীকে এত ভালোবাসতেন যে তিনি তাঁর সন্তানকে দিলেন পবিত্র মেরিকে এবং তিনি তাঁকে পেয়ে কি করলেন?


যে মুহূর্তে তিনি এলেন তাঁর জীবনে-তৎক্ষণাৎ তিনি সেই সুসংবাদ দিতে দ্রুত ছুটে গেলেন, আর যেই তিনি প্রবেশ করলেন তাঁর খুড়তুতো বোনের বাড়িতে, সেই অজন্মানো শিশু, এলিজাবেথের গর্ভে আনন্দে নেচে উঠল। সেই ছোটো অজন্মানো শিশুই ছিলেন শাস্তির প্রথম দূত। তিনি শাস্তির যুবরাজকে চিনতে পারলেন, তিনি বুঝলেন ক্রাইস্ট এসেছেন তোমাদের এবং আমাদের জন্য সুসংবাদ দিতে। আর এটাই যেন যথেষ্ট নয়- নতুনরূপে আবির্ভূত হওয়াটাই যথেস্ট নয়, তিনি ক্রুশবিদ্ধ হয়ে জীবন দিলেন মহান প্রেম প্রকাশ করতে। আর তিনি প্রাণ দিলেন তোমাদের জন্য, আমাদের জন্য আর সেই কুষ্ঠরুগীর জন্য, ক্ষুধায় মরণাপন্ন সেই মানুষটির জন্য আর কেবলমাত্র কলকাতার রাস্তায় পড়ে থাকা উলঙ্গ মানুষটির জন্য নয়, আফ্রিকা, নিউইয়ক, লন্ডন, ওসলোর রাস্তায় পড়ে থাকা মানুষের জন্যও। তিনি আমাদের কাছে দাবি করলেন যে যেমনটা তিনি আমাদের প্রত্যেককে ভালোবাসেন তেমনই আমরা যেন একে অপরকে ভালোবাসি। আমরা গসপেলের বাণীতে পড়ে ভালোভাবে জানি যে, আমি যেমন তোমাদের ভালোবাসছি-


আমি যেমনভাবে তোমাদের ভালোবাসি তেমনই বিশ্বপিতা আমাকে ভালোবাসেন-আমি তোমাদের ভালোবাসি-আর বিশ্বপিতা তাঁকে যত তীব্রভাবে ভালোবেসেছিলেন তিনি আমাদের জন্য তাঁকে দান করেছিলেন আর আমরা একে অপরকে যতবেশি ভালোবাসি- আমরাও একে অপরকে ততটাই দান করি, যতক্ষণ না এটাতে আমরা আহত হই। আমাদের পক্ষে এটা বলা যথেষ্ট নয় যে আমি ঈশ্বরকে ভালোবাসি কিন্তু আমার প্রতিবেশিকে ভালোবাসি না। সন্ত জন বলেছিলেন, যদি তুমি তোমার প্রতিবেশিকে ভালো না বেসে বলো তুমি ঈশ্বরকে ভালোবাসো, তাহলে তুমি মিথ্যাবাদী। যদি তুমি, তোমার প্রতিবেশী যাকে তুমি দেখতে পাচ্ছ, স্পর্শ করতে পারছো, যার সাথে তুমি বাস করছো তাকেই না ভালোবাসো তাহলে যে ঈশ্বরকে তুমি দেখতে পাও না, তাকে তুমি কীভাবে ভালোবাসবে? তাই আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ এটা বুঝতে পারা যে প্রকৃত ভালোবাসায় আঘাত সহ্য করতে হয়। জেশাস আমাদেরকে ভালোবেসে আঘাত সহ্য করেছেন। আর তাঁর সেই উচ্চ ভালোবাসাকে আমরা স্মরণ করি এটা নিশ্চিত হতে যে তিনি তাঁর প্রতি আমাদের ভালোবাসার ক্ষুধা মেটাতে নিজের জীবনকে আমাদের কাছে বুটির মতো তুলে ধরেছেন। ঈশ্বরের প্রতি আমাদের ক্ষুধা, কারণ আমরা সেই ভালোবাসার জন্য সৃষ্ট। আমরা তাঁর মানবসন্তান। আমরা সৃষ্টি হয়েছি ভালোবাসতে, অপরের ভালোবাসা পেতে। তারপর তিনি যেমন করে আমাদের ভালোবেসেছেন, তেমন করে আমরাও যেন তাঁকে ভালোবাসতে পারি, তাঁকে সন্তুষ্ট রাখতে পারি। তাই তো তিনি মানবরূপে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়েছেন। তিনি নিজে কখনো একজন ক্ষুধার্ত, বিবস্ত্র, গৃহহীন, অসুস্থ, কারাগারে বন্দি, নিঃসঙ্গ অথবা অবাঞ্ছিত মানুষ-রূপে আমাদের সামনে উপস্থিত হন এবং তিনি বলেন: তোমরা আমার এই অবস্থা করেছ। আমাদের ভালোবাসার জন্য ক্ষুধার্ত এবং এই হল আমাদের দরিদ্র মানুষের ক্ষুধা। যে ক্ষুধা তোমাকে আমাকে অবশ্যই খুঁজতে হবে, আর আমরা তা পেতে পারি আমাদের নিজেদেরই

ঘরের কোণে।

আমি কখনোই সেই অভিজ্ঞতার কথা ভুলতে পারবো না যা আমি একটি বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে অর্জন করেছিলাম। সেখানে ছেলেমেয়েদের ছেড়ে বৃদ্ধ বাবা-মায়েরা থাকেন। তারা তাদের সেখানে রেখে দিয়ে এসে হয়তো তাদের কথা ভুলে গেছে। আমি সেখানে গেলাম আর দেখলাম যে সেই আশ্রমে তাদের সবকিছু আছে, সুন্দর সুন্দর জিনিস; কিন্তু সবাই দরজার দিকে তাকিয়ে আছে। আর আমি একজনকেও দেখলাম না যার মুখে হাসি আছে। আমি সিস্টারকে জিজ্ঞাসা করলাম: এখানে সবকিছু থাকা সত্ত্বেও কীভাবে এটা হল। কেন তারা সবাই দরজার দিকে তাকিয়ে আছে। তারা হাসছে না কেন। আমি আমার লোকেদের মুখে হাসি দেখে অভ্যস্ত। এমনকি মৃত্যুপথযাত্রী ব্যক্তির মুখেও হাসি দেখেছি। আর তিনি বললেন। এটা প্রত্যেক দিনের ঘটনা। তারা প্রত্যাশা করে, তারা আশা করে যে কোনো ছেলে বা মেয়ে ওদের সঙ্গে দেখা করতে আসবে। তারা ওদের ভুলে গেছে বলেই ওরা কষ্ট পাচ্ছে। তাহলে দেখুন- এখানেই তো ভালোবাসা আসে। এখানে যে দারিদ্র্য আছে তা আমাদের ঘরেও আছে- এমনকি ভালোবাসাকে অবহেলা করা। হয়তো আমাদের নিজেদের পরিবারে আমরা এমন কাউকে দেখি যে একাকীত্বের যন্ত্রণা পাচ্ছে, যে অসুস্থ, যে উদ্বিগ্ন, আর আমাদের প্রত্যেকের কাছেই এগুলো কঠিন দিন। আমরা কি সেখানে পৌঁছাই আমরা কি তাঁদেরকে গ্রহণ করতে যাই, মা কী সেখানে গিয়ে শিশুকে কোলে তুলে নেন?


-


পশ্চিমি দেশগুলিতে বহু ছেলেমেয়েকে মাদকাসক্ত দেখে আমি বিস্মৃত হয়ে গেছি। আমি এর কারণ খোঁজার চেষ্টা করলাম। কেন এরকম হয়, তার উত্তরটা ছিল তাদের ভালোবাসার মতো কেউ তাদের পরিবারে ছিল না। বাবা এবং মা এত ব্যস্ত ছিলেন যে তাঁদের কোনো সময় নেই। কমবয়সি বাবা মায়েরা কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন আর তাঁদের শিশুরা রাস্তায় ঘোরাফেরা করে আর খারাপ কিছুতে জড়িয়ে পড়ে। আমরা শান্তির কথা বলছি। এসব ঘটনা শান্তিভঙ্গ করে, তবে আমার মনে হয় শান্তিকে আজ সবচেয়ে বেশি করে ধ্বংস করছে ভ্রুণ হত্যা, কারণ এটা প্রত্যক্ষ যুদ্ধ, একটা সরাসরি হত্যা- মায়ের নিজের হাতে প্রত্যক্ষ খুন। আর আমরা বাইবেলে পড়েছি, ঈশ্বর খুব স্পষ্ট করে বলেছেন, যদি কোনো মা তাঁর সন্তানকে ভুলে যান, তাহলেও - আমি তোমাকে ভুলবো না- আমি তোমাকে আমার হাতের তালুতে খোদাই করেছি। আমরা তাঁর হাতে খোদিত হয়েছি, তাঁর এত কাছের যে, অজ্ঞাত শিশু ঈশ্বরের হাতেই খোদিত। আর যা আমাকে সবচেয়ে বেশি আলোড়িত করে সেটা হল বাক্যের শুরুটা যে যদিও কোনো মা বিশেষ কারণবশত নিজের সন্তানকে বিস্মৃত হয়, অসম্ভব ব্যাপার হলেও, যদিও সে ভুলে যেতে পারে, তাহলেও আমি তোমাকে ভুলব না নিশ্চিতভাবে। আর আজ সবচেয়ে বড়ো বিষয় শান্তি বিনাশের জন্য হল গর্ভপাত। আজ আমরা যারা এখানে দাঁড়িয়ে আছি-সেটা সম্ভব হয়েছে আমাদের বাবা মা আমাদের চেয়েছেন বলেই। আমাদের বাবা মা-রা যদি আমাদের সাথে এটা করতেন তাহলে আমরা এখানে আসতে পারতাম না। আমাদের শিশুদের, আমরা তাদেরকে চাই, তাদের ভালোবাসি, কিন্তু লক্ষ লক্ষ অনাকাঙ্ক্ষিত শিশুদের ভাগ্যে কী ঘটবে?


অনেক লোক ভারত ও আফ্রিকার শিশুদের কথা ভেবে খুব উদ্বিগ্ন বোধ করেন, যেখানে অনেক শিশুই মারা যায় হয়তো অপুষ্টিতে, ক্ষুধায় আরও অনেক রকমভাবে, কিন্তু লক্ষ লক্ষ শিশু মায়ের ইচ্ছায় নিহত হচ্ছে। আর এটাই আজ সবচেয়ে বড়ো শান্তি ধ্বংসকারী। কারণ যদি কোনো মা তাঁর নিজের সন্তানকে হত্যা করেন। তাহলে আমাদের একে অপরকে হত্যা করা ছাড়া আর কী বাকি রইল-এর মাঝে তো কিছুই রইল না। আর তাই, ভারতবর্ষে এই আবেদন করি, সর্বত্র আমি এই আবেদন করি-শিশুটিকে আপনারা আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিন, আর এই বছরটা হল শিশুবর্ষ: আমরা শিশুটির জন্য কী করেছি? এই বছরের শুরুতেই আমি বলেছিলাম, আমি সর্বত্র বলেছিলাম আর আমি এখনও বলছি এই বছরটাকে করে তুলুন এমন, যাতে আমরা প্রতিটি জন্ম নেওয়া ও অজ্ঞাত শিশুকে যেন কাঙ্ক্ষিত করে তুলতে পারি। আর আজ হল বছরের শেষদিন, আর আমরা কি প্রকৃতই শিশুদের


কাঙ্ক্ষিত করে তুলেছি? আমি আপনাদের সামনে এক অবাক করা তথ্য দেব। আমরা দত্তক গ্রহণের দ্বারা গর্ভপাতের মোকাবিলা করেছি। আমরা হাজার হাজার শিশুর প্রাণরক্ষা করেছি, আমরা সব ঔষধখানায়, হাসপাতালে, থানায় এই বার্তা পৌঁছে দিয়েছি- দয়া করে শিশুটিকে নষ্ট করবেন না, আমরা শিশুটিকে গ্রহণ করব। তাই দিনরাতের প্রতি ঘণ্টায় সর্বদা কেউ না কেউ আসছেন-আমরা পেয়েছি অনেক অবিবাহিতা মায়েদের-তাদের আসতে বলুন। আমরা তোমাদের যত্ন নেব। আমরা আপনার কাছ থেকে শিশুটিকে গ্রহণ করব, আমরা শিশুটির জন্য একটা বাড়ির ব্যবস্থা করে দেব। আর আমরা দেখেছি সেই সব পরিবার যাদের কোনো সন্তান নেই, তাদের কী প্রচণ্ড চাহিদা। এটাই আমাদের কাছে ঈশ্বরের আশীর্বাদ। আর আমরা আরও একটা সুন্দর জিনিস করেছি আমরা আমাদের ভিক্ষুকদের, আমাদের কুষ্ঠরুগীদের, আমাদের বস্তিবাসীদের, আমাদের পথবাসী মানুষদের শেখাচ্ছি স্বাভাবিক পরিবার পরিকল্পনার কথা।


আর কলকাতায় মাত্র ছ' বছরেই সবটাই কলকাতা শহরে- আমরা বিভিন্ন পরিবার থেকে ৬১,২৭৩ জন শিশুকে কম জন্মাতে দেখেছি তারা যেহেতু স্বাভাবিকভাবে ইন্দ্রিয় দমন অভ্যাস করেছে, আত্মসংযম অভ্যাস করেছে, পারস্পরিক ভালোবাসার মাধ্যমে। আমরা তাদের শেখাই উন্নতার মাত্রা যেটা খুবই সুন্দর, খুব সহজ আর আমাদের দরিদ্র লোকেরা তা বোঝেন আর আপনারা কী জানেন তাঁরা আমাকে কী বলেছেন? আমাদের পরিবার স্বাস্থ্যবান। আমাদের পরিবার ঐক্যবদ্ধ আর আমরা যখনই চাইব তখনই সন্তানলাভ করব। এত পরিচ্ছন্ন এইসব রাস্তার লোক, এইসব ভিক্ষুক-আমার মনে হয় যদি আমাদের জনগণ এরূপ আচরণ করেন তাহলে আপনি, আমি আর অন্য সকলে যাঁরা জানেন ঈশ্বরসৃষ্ট জীবননাশ না করার উপায়, তারা কত বেশি করতে পারি।

দরিদ্র মানুষেরা অতীব মহান মানুষ। তাঁরা আমাদের কত সুন্দর জিনিস শেখাতে পারেন। এই সেদিন তাঁদের একজন আমাকে ধন্যবাদ জানাতে এসে বললেন, তোমরা যারা পবিত্রতা রক্ষা করার শপথ নিয়েছ, তারা আমাদের পরিবার পরিকল্পনার শিক্ষা দেওয়ার জন্য সর্বোত্তম। কারণ এটি একে অপরের প্রতি ভালোবাসার কারণে আত্মসংযম ছাড়া আর বেশি কিছু নয়। আর আমার মনে হয় এটা খুব সুন্দর কথা। আর এই লোকগুলির হয়তো খাবার কিছুই নেই, হয়তো বা থাকার জন্য এদের কোনো ঠাঁই নেই, কিন্তু তারা মহৎ মানুষ। দরিদ্ররা আশ্চর্যজনক মানুষ। একদিন সন্ধ্যাবেলায় আমরা আশ্রম ছেড়ে বেরিয়ে রাস্তা থেকে চারজন মানুষকে তুলে নিয়ে এলাম। আর ওদের মধ্যে একজন অত্যন্ত খারাপ অবস্থায় ছিলেন আর আমি আমার সিস্টারদের বললাম তোমরা অন্য তিনজনের যত্ন নাও। আমি যে লোকটির অবস্থা খুব খারাপ তাকেই দেখছি। তাই আমার ভালোবাসা দিয়ে তার জন্য যা করা যায় তাই করলাম। আমি তাকে বিছানায় শোয়ালাম আর তার মুখে ছিল অপূর্ব এক সুন্দর হাসি। সে আমার হাত ধরল আর শুধু একটিমাত্র শব্দই বলতে পেরেছিল; তোমাকে ধন্যবাদ আর তারপর সে মারা গেল।


আমি তাঁর সামনে নিজের বিবেককে পরীক্ষা না করে থাকতে পারিনি আর আমি নিজের কাছে জানতে চাইলাম আমি যদি তাঁর জায়গায় থাকতাম তাহলে আমি কী বলতাম। আমার উত্তর ছিল খুবই সহজ সরল। আমি আমার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করতাম, আমি বলতাম আমি ক্ষুধার্ত, আমি মরণাপন্ন, আমি শীতার্ত, আমি যন্ত্রণাবিদ্ধ অথবা এইরকম কিছু, কিন্তু সে আমাকে আরও অনেক কিছু দিল- সে আমাকে জানাল তার কৃতজ্ঞতাসূচক ভালোবাসা। আর সে তার মুখে স্মিতহাসি নিয়ে মারা গেল। আর সেই মানুষটাকে যাকে আমরা নর্দমা থেকে তুলে আনলাম, কীটে খাওয়া আধখানা শরীর, আর আমরা তাকে আনলাম আমাদের আশ্রমে। আমি রাস্তার পশুর মতো বেঁচেছি, কিন্তু আমি দেবদূতের মতো মারা যাচ্ছি, ভালোবাসা ও যত্নের মাঝে। আর যে মানুষটা এইভাবে কথা বলে তার মহত্ত্ব আবিষ্কার করাটা বড়োই আশ্চর্যের, যে মানুষটা কাউকে নিন্দা না করে, কাউকে অভিশাপ না দিয়ে, কোনো কিছুর সঙ্গে তুলনা না করে মারা গেল। দেবদূতের মতো - এটাই আমাদের জনগণের মহত্ত্ব। আর সেই কারণেই আমরা জিশুর কথা বিশ্বাস করি: আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম-আমি বস্ত্রহীন ছিলাম-আমি গৃহহীন ছিলাম-আমি অবাঞ্ছিত ছিলাম-ভালোবাসা যত্ন থেকে বঞ্চিত- আর এটা তোমরা আমার জন্য করেছিলে।


আমি বিশ্বাস করি আমরা সত্যিকারের সমাজসেবী নই। লোকেদের কাছে মনে হতে পারে আমরা সমাজসেবী কিন্তু আমরা প্রকৃতপক্ষে হৃদয়ে ধ্যানমগ্ন। কারণ আমরা চব্বিশ ঘণ্টা জিশু খ্রিস্টের পবিত্রদেহ হৃদয়ে করছি। আমরা চব্বিশ ঘণ্টা সেই উপস্থিতির মধ্যে আছি, আর এমনটাই আমার কাছে প্রযোজ্য। আপনারাও চেষ্টা করুন আপনার পরিবারে ঈশ্বরীয় সভাকে আনতে, কেননা সেই পরিবার একরে থাকে, যে পরিবার একসাথে প্রার্থনা করে। আর আমার মনে হয় যে আমাদের পরিবারে সেই শান্তি আনতে গেলে কোনো বোমা, বন্দুকের মাধ্যমে ভাংসের দরকার নেই, তবে একসাথে থাকা একে অপরতে ভালোবাসার মাধ্যমেই আনতে পারি শাস্তি, আনন্দ আর গৃহে এতে অপরের উপস্থিতির শক্তি। আর পৃথিবীতে যত অমঙ্গল আছে সবর আমরা অতিক্রম করতে পারব।


এই পৃথিবীতে কত কষ্ট, কত ঘৃণা, কত দুঃখ এবং আমরা আমাদের প্রার্থনা দিয়ে আমাদের ত্যাগ দিয়ে সেই ভালোবাসা শুরু করছি আমাদের বাড়ি থেকে। বাড়ি থেকেই ভালোবাসার শুরু হোক, আর আমরা কতটা কাজ করলাম তার নিরিখে তার পরিচয় পাওয়া যায় না, কিন্তু যে কাজ আমরা করছি সেই কাজে কতটা ভালোবাসা আমরা দিলাম সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের জন্য আমরা কতটা করি, সেটা ব্যাপার নয়। কারণ তিনি অনন্ত, কিন্তু আমরা সেই কাজে কতটা ভালোবাসা প্রয়োগ করি, যে মানুষের আমরা সেবা করছি সেই মানুষটির জন্য আমরা কতটা ভালোবাসা দিয়ে সেই সেবা করছি সেটাই বিবেচ্য।


কিছু বছর আগে কলকাতায় আমাদের চিনি জোগাড় করতে খুব সমস্যা হয়েছিল আর আমি জানিনা কীভাবে খবরটা ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের কাছে পৌঁছে গিয়েছিল। আর চার বছরের একটি হিন্দু পরিবারের ছেলে বাড়িতে গিয়ে তার বাবা-মাকে বলল: আমি তিনদিন চিনি খাবো না, আমি মাদার টেরেজাকে তাঁর আশ্রমের ছেলেমেয়েদের জন্য আমার ভাগের চিনি দিয়ে আসব। তিনদিন পর তার বাবা-মা তাকে আমাদের আশ্রমে নিয়ে এলেন। আগে তাদের সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়নি এবং এই বাচ্চা ছেলেটি আমার নামটাই ঠিকঠাক উচ্চারণ করতে পারছিল না, কিন্তু সে এটা ঠিক মতো জানত যে সে কী করতে এসেছে। সে জানত যে তাকে তার ভালোবাসাকে অপরের সাথে ভাগ করে নিতে হবে।


আর ঠিক এই কারণেই আমি আপনাদের সকলের এত ভালোবাসা পেয়েছি। যখন আমি এখানে এসেছি তখন থেকে আমি ভালোবাসা দ্বারা বেষ্টিত হয়েছি। আর সেই ভালোবাসা সত্যকারের, প্রকৃত অনুভূত ভালোবাসা। মনে হচ্ছে যেন ভারতের, আফ্রিকার প্রত্যেকে আপনাদের কাছে বিশেষ কোনো জন। আমার মনে হচ্ছে আমি যেন আমার ঘরেই আছি। আজকেই আমাদের সিস্টারদের বলছিলাম কলকাতায় আমার সিস্টারদের সাথে যেমন থাকি এখানে এই কনভেন্টের সিস্টারদের সাথে ঠিক তেমন স্বাচ্ছন্দ্যে আছি। খুবই স্বাচ্ছন্দ্যে আছি এখানে।

আর তাই আমি এখানে আপনাদের সাথে কথা বলছি আমি চাই এখানে আপনারা দরিদ্রদের খুঁজে দেখুন, প্রথমে আপনার নিজের বাড়িতে। আর সেখান থেকেই আপনারা ভালোবাসতে শুরু করুন। আপনাদের নিজেদের লোকেদের কাছে সেই সুসংবাদ পৌঁছে দিন। আর আপনারা কাছের প্রতিবেশিকে খুঁজে বার করুন। আপনারা কী জানেন তারা কারা? আমার নিজের এক আশ্চর্যজনক অভিজ্ঞতা হয়েছিল এক হিন্দু পরিবার সম্পর্কে যে পরিবারে ছিল আটটি সন্তান। এক ভদ্রলোক আমাদের আশ্রমে এসে জানালেন: মাদার টেরেজা, আটটি সন্তানের একটি পরিবার। অনেকদিন ওরা না খেয়ে আছে-কিছু করুন। তাই আমি কিছুটা ভাত নিয়ে তৎক্ষণাৎ সেখানে গেলাম। আর আমি ছেয়েমেয়েগুলিকে দেখলাম ক্ষুধায় তাদের চোখগুলি চিকচিক করছে। আমি জানি না আপনারা কখনও ক্ষুধা দেখেছেন কিনা। কিন্তু আমি এটা প্রায়ই প্রত্যক্ষ করি। আর বাড়ির কর্ত্রী ভাতটুকু নিলেন, ভাগ করলেন এবং বাইরে চলে গেলেন। যখন তিনি আবার ফিরে এলেন। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম তিনি কোথায় গিয়েছিলেন, তিনি কী করলেন? আর তখন তিনি আমাকে খুব সোজা একটি উত্তর দিলেন: ওরাও ক্ষুধার্ত। যেটা আমাকে সবচেয়ে বেশি অবাক করল যে তিনি জানতেন তারা কারা, একটা মুসলিম পরিবার আর তিনি সেটা ভালোভাবেই জানতেন। সেদিন সন্ধ্যায় আমি আর বেশি ভাত আনলাম না কারণ আমি চেয়েছিলাম যে ভাগ করে খাওয়ার আনন্দটা তারা সকলে উপভোগ করুক। কিন্তু সেখানে সেইসব শিশুরা ছিল আনন্দে উল্লাসিত, তাদের মায়ের সাথে সেই আনন্দ উপভোগ করেছিল, কারণ তিনি ভালোবাসা দান করতে পেরেছিলেন। আর আপনারা দেখছেন যে ভালোবাসা কোথা থেকে শুরু হয়- এটা হয় বাড়ি থেকে। আর আমি চাই আপনাদেরও তাই হোক আর আমি খুবই কৃতজ্ঞ আমি যা পেয়েছি তার জন্য। এটা এক অসামান্য অভিজ্ঞতা আর আমি ভারতে ফিরে যাব- পরের সপ্তাহে আমি ফিরে যাব। এ মাসের ১৫ তারিখে আশা করি- আর আমি আপনাদের জন্য ভালোবাসা নিয়ে আসতে পারব।


আর আমি ভালোভাবেই জানি যে আপনারা আপনাদের প্রাচুর্য থেকে এটা দিচ্ছেন না, কিন্তু আপনারা দিচ্ছেন যতক্ষণ না এটা আপনাদের আঘাত করছে। আজ তাদের ছোটো ছোটো সন্তান আছে আমি এতটাই বিস্মৃত ওই ক্ষুধার্ত শিশুগুলির মধ্যে কত আনন্দ আছে। ওই শিশুদের ভালোবাসা, যত্ন ও কোমলতার দরকার, তারা যেমন তাদের বাবা মার থেকে কত কিছু পায়। তাই আসুন আমরা ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই কারণ আমাদের সুযোগ রয়েছে একে অপরের সাথে পরিচিত হওয়ার আর একে অপরকে জানা আমাদের খুব কাছে নিয়ে এসেছে। আমরা শুধু ভারত বা আফ্রিকার শিশুদের সাহায্য করতে সক্ষম হব তাই নয়, সারা বিশ্বের শিশুদের সাহায্য করতে সক্ষম হব। কারণ আমাদের সিস্টাররা সারাবিশ্বে ছড়িয়ে রয়েছেন। নোবেল শান্তির পুরস্কার হিসেবে এই যে পুরস্কার আমি পেয়েছি তা দিয়ে আমি এবার যারা গৃহহীন তাদের জন্য বাড়ি তৈরি করবার চেষ্টা করব। কারণ আমার বিশ্বাস ভালোবাসা শুরু হয় নিজের ঘরে এবং আমরা যদি গরিব মানুষের জন্য বাড়ি তৈরি করতে পারি-আমার মনে হয় ভালোবাসা আরও ছড়িয়ে পড়বে। এই বোধগম্য ভালোবাসার মাধ্যমে আমরা সমর্থ হব পৃথিবীতে শান্তি আনতে, গরিব মানুষের কাছে ভালো খবর পৌঁছে দিতে। প্রথমে আমাদের নিজেদের পরিবারের দরিদ্রদের প্রতি, তারপর আমাদের দেশের দরিদ্রদের প্রতি, আর তারপর পৃথিবীর দরিদ্র মানুষের প্রতি আমাদের নজর দিতে হবে।

এই জিনিস করতে গেলে আমাদের জীবন প্রার্থনায় প্রবাহিত করতে হবে, আমাদের জীবনকে জিশু খ্রিস্টের সাথে একাত্ম করতে হবে। যাতে আমরা উপলব্ধি করতে পারি, পরস্পরের সাথে ভাগ করে নিতে পারি। কারণ আজ অনেক দুঃখ - আর আমি মনে করি আবার বিশ্বজুড়ে খ্রিস্টের আবেগ পুনর্জাগরিত হচ্ছে- আর আমাদের সেই আবেগ, মানুষের দুর্দশাকে ভাগ করে নিতে হবে। সারা পৃথিবী জুড়ে শুধু গরিব দেশে নয়, পশ্চিম বিশ্বে আমি দেখেছি কত দারিদ্রদ্র্য - যেটাকে অতিক্রম করা আরও আরও কঠিন। যখন আমি রাস্তা থেকে একটি ক্ষুধার্ত মানুষকে তুলে আনি, আমি তাকে এক থালা ভাত, এক টুকরো ত্রুটি দিয়ে খুশি হই। আমি সেই ক্ষুধা নিবারণ করেছি। কিন্তু যে লোকটা আবন্ধ, যে অনুভব করে যে সে অবাঞ্ছিত, ভালোবাসাহীন, ভীত, যে - ব্যক্তিকে সমাজ থেকে দূরে নিক্ষেপ করা হয়েছে- সে দারিদ্র্য যে - কতখানি কষ্টদায়ক, কত তীব্র, আর তাই আমি তাকে খুব কঠিন বলে ভাবি। পশ্চিমের দেশগুলিতে আমাদের সিস্টাররা এইসব লোকেদের মধ্যে কাজ করেছেন। তাই আপনাদের আমাদের জন্য অবশ্যই প্রার্থনা করা দরকার যাতে আমরা সেই সুসংবাদ হয়ে উঠতে পারি, কিন্তু আপনাদের সাহায্য ছাড়া আমরা সেই কাজ করে উঠতে পারি না। আপনাদেরই নিজেদের দেশে সেটা করতে হবে। আপনাদের সেই দরিদ্র মানুষদেরকে খুঁজে বার করতে হবে, হয়তো আমাদের এখানে অনেক পার্থিব জিনিস আছে, সব কিছুই আছে, কিন্তু আমার মনে হয় যে, যদি আমরা নিজেদের বাড়ির ভিতরে তাকাই, তখন দেখতে পাব একে অপরের দিকে হাসিমুখে তাকানো কতটা কষ্টের, আর সেই হাসিটাই হল ভালোবাসার শুরু।


তাই আসুন হাসিমুখে আমরা সকলে পরস্পরের সাথে মিলিত হই কারণ হাসিই হল ভালোবাসার শুরু এবং একবার যদি আমরা একে অপরকে ভলোবাসতে শুরু করি, স্বাভাবিকভাবেই আমরা কিছু করতে চাইব। তাই আপনারা প্রার্থনা করুন আমাদের সিস্টারদের জন্য, আমার জন্য, আমাদের ভাইদের জন্য এবং আমাদের সহকর্মীদের জন্য যারা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছে। যাতে আমরা ঈশ্বরের উপহারের প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পারি, তাঁকে ভালোবাসতে পারি। আর আপনাদের সাথে একত্রে দরিদ্রদের মধ্যে তাঁর সেবা করতে পারি। আমরা যে কাজ করেছি, সে কাজ করতে আমরা পারতাম না যদি আপনারা আপনাদের প্রার্থনার সাথে আমাদের সঙ্গী না হতেন, এই নিরবচ্ছিন্ন দান দিয়ে আমাদের সঙ্গে ভাগ না করতেন। কিন্তু আমি চাই না যে আপনারা আপনাদের প্রাচুর্য থেকে আমাকে দান করুন, আমি চাই যে আপনারা দান করুণ যতক্ষণ না আপনাদের কষ্ট হয়।


অপর একদিনে আমি ১৫ ডলার পেয়েছিলাম একজন মানুষের কাছ থেকে যিনি কুড়ি বছর ধরে চিত হয়ে শুয়ে আছেন এবং শরীরের যে অংশটি তিনি নাড়াতে পারতেন সেটা হল তার ডান হাত। আর - তার একমাত্র সঙ্গী যার সাহচর্য তিনি উপভোগ করতেন তা হল ধূমপান। আর তিনি আমাকে বললেন, "এক সপ্তাহ আমি ধূমপান করিনি। আর আমি আপনাকে এই অর্থ পাঠাচ্ছি।” এটা এক মারাত্মক ত্যাগ 

তার পক্ষে, কিন্তু দেখুন এটা কত সুন্দর, কীভাবে, তিনি ভাগ করে দিলেন। আর আমি সেই অর্থ দিয়ে বুটি কিনলাম এবং আমি দিলাম যারা ক্ষুধার্ত তাদের। দু-পক্ষই আনন্দ পেল। তিনি দিলেন আর দরিদ্ররা গ্রহণ করলেন। এটা এমন কিছু যা আপনি ও আমি একে অপরে ভাগাভাগি করে নিতে পারি কারণ এটা হল আমাদের ঈশ্বরের উপহার অপরের সাথে ভালোবাসা ভাগ করে নেওয়ার। এটি এমন হোক যেটি ছিল জিশু খ্রিস্টের জন্য। চলুন আমরা একে অপরকে ভালোবাসি যেভাবে তিনি আমাদের ভালোবাসতেন। চলুন আমাদের অখণ্ড ভালোবাসা দিয়ে তাঁকে ভালোবাসি এবং তাঁকে ভালোবাসার আনন্দ, একে অপরকে ভালোবাসার আনন্দ চলুন আমরা ভাগ করে নিই কারণ খ্রিস্টের জন্মদিন আসছে। জিশুকে ভালোবাসার সেই আনন্দ আমাদের হৃদয়ে থাকুক। আর আমরা যেখানে সব কিছুর সংস্পর্শে আসি, সেখানেই যেন সকলের সাথে ভালোবাসা ভাগ করে নিই। আর সেই বিচ্ছুরিত আনন্দই তো প্রকৃত আনন্দ। কারণ আমাদের অসুখী হবার কোনো কারণই নেই, কারণ আমাদের সাথে জিশু খ্রিস্ট নেই একথা বলতে পারি না। আমাদের সকলের হৃদয়ে জিশু আছেন। যে দরিদ্রদের সাথে আমরা মিশি, তাদের মধ্যে ঈশ্বর আছেন, যে হাসি আমরা দিই আর যে হাসি আমরা পাই তার মধ্যেও ঈশ্বর আছেন। চলুন সমস্ত বিষয়গুলিকে আমরা এক জায়গায় করি: কোনো শিশুই অবাঞ্ছিত হবে না, আর আমরা সবসময় একে অপরের সাথে মিলিত হব হাসিমুখে, বিশেষ করে যখন হাসাটা খুবই কঠিন।


কিছুদিন আগে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৪ জন অধ্যাপকের আমার কাছে আসার কথা আমি কখনো ভুলে যাব না। তাঁরা আমাদের কলকাতার বাড়িতে এসেছিলেন। তাঁরা মরণাপন্ন মানুষদের আশ্রমটিতে গিয়েছিলেন। সেই বিষয়ে আমরা কথাবার্তা বলছিলাম। কলকাতায় মরণাপন্ন লোকেদের জন্য আমাদের একটি আশ্রয়স্থল আছে, যেখানে আমরা কেবলমাত্র কলকাতার রাস্তা থেকে ৩৬,০০০ এর বেশি লোককে তুলে এনে রেখেছিলাম। আর সেই বৃহৎ সংখ্যার মধ্যে ১৮,০০০ এর বেশি মানুষ সুন্দরভাবে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। তারা ঈশ্বরের কাছে চলে গিয়েছেন। যারা আমাদের এই বাড়িতে এসেছিলেন তাদের সাথে আমরা প্রেম সহানুভূতির কথা বলছিলাম। আর তখন তাদের মধ্য থেকে একজন আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন; মাদার দয়া করে আমাদের এমন কিছু বলুন যা আমরা মনে রাখতে পারি এবং আমি তাদের বলেছিলাম; একে অপরকে দেখে হাসো। পরিবারের একে অপরের জন্য সময় দাও, একে অপরের দিকে হাসো। তারপর অন্য একজন আমাকে প্রশ্ন করলেন: আচ্ছা আপনি কি বিবাহিত এবং আমি বললাম হ্যাঁ, এবং মাঝে মধ্যে জিশু খ্রিস্টের দিকে তাকিয়ে হাসাটা খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়, কারণ মাঝে মধ্যে তিনি বড্ড বেশি দাবি করেন। এটি প্রকৃতই সত্যি আর এখান থেকেই আসে ভালোবাসা যখন ভালোবাসা দাবি করে এবং তবুও এটি আমরা তাঁকে দিতে পারি আনন্দের সঙ্গে।

ঠিক যেমন আজ আমি আপনাদের বলছি, আমি বলছি যদি স্বর্গে কোনো কিছুর জন্য আমি না যাই, তাহলে আমি অন্তত এই প্রচারটুকুর জন্য স্বর্গে যেতে পারি, কারণ এটা আমার মনকে শুদ্ধ করেছে আর আমাকে উৎসর্গীকৃত করেছে, আমাকে সত্যকারের স্বর্গে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করেছে। আমার মনে হয় এটা একটা বিশেষ জিনিস যে আমরা অবশ্যই সুন্দর করে বাঁচব, আমাদের সাথে আছেন জিশু আর তিনি আমাদের ভালোবাসেন। যদি আমরা কেবল এটা মনে রাখতে পারি যে ঈশ্বর আমাদের ভালোবাসেন আর তিনি যেমন আমাকে ভালোবাসেন তেমন আমারও অন্যদের ভালোবাসার একটা সুযোগ আছে, বড়ো বড়ো জিনিসের মধ্যে নয়, কিন্তু পরম ভালোবাসায় ছোটো ছোটো কাজের মাধ্যমে, তাহলে নরওয়ে ভালোবাসার বাগানে পরিণত হবে। এটা কি সুন্দর হবে না যদি এখানে আমরা ভালোবাসার কেন্দ্রস্থল তৈরি করতে পারি? এখান থেকে না-জন্মানো একটি শিশুর জীবনের আনন্দ বেরিয়ে আসুক। যদি তোমরা শান্তির বিশ্বে জ্বলন্ত আলো হয়ে উঠতে পারো, তাহলে নোবেল শান্তি পুরস্কার হবে নরওয়ের মানুষের দেওয়া প্রকৃত উপহার। ভগবান সকলকে আশীর্বাদ করুন।






Comments