৩২ হাজার প্রাথমিক নিয়োগ মামলায় শুনানি নয়, ডিভিশন বেঞ্চ থেকে সরে দাঁড়ালেন বিচারপতি সেন
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা: চাঞ্চল্যকর প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত ৩২ হাজার চাকরি বাতিল মামলার শুনানি স্থগিত রইল কলকাতা হাই কোর্টে। ডিভিশন বেঞ্চের বিচারপতি সৌমেন সেন ‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখিয়ে নিজেকে মামলার শুনানি থেকে সরিয়ে নেন। ফলে মামলাটি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রধান বিচারপতি টি.এস. শিবজ্ঞানমের কাছে।
সোমবার বিচারপতি সেন ও বিচারপতি স্মিতা দাস দে’র ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিচারপতি সেনের সরে দাঁড়ানোয়, ওই বেঞ্চ আর মামলাটি শুনতে পারবে না বলে আদালতের নিয়ম।
উল্লেখ্য, গত বছরের মে মাসে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন, ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিল করতে হবে। এরপর রাজ্য সরকার সেই রায়ের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করে। একইসঙ্গে, বিচারপতি অমৃতা সিংহ ৪২ হাজার প্রার্থীর প্যানেল প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছিলেন, যার কার্যকারিতা আপাতত সুপ্রিম কোর্টে স্থগিত।
এদিকে, সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট ২৬ হাজার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে, যা রাজ্যজুড়ে প্রবল আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তার মধ্যেই আবার প্রাথমিক নিয়োগ মামলা নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে বিভিন্ন মহলে।
আদালতে মামলাকারীদের দাবি, নম্বর বিভাজনের তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গিয়েছে—অনেক অপ্রশিক্ষিত ও কম নম্বর পাওয়া প্রার্থী চাকরির সুপারিশ পেয়েছেন। এরই ভিত্তিতে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বিতর্কিত মন্তব্য করে প্যানেল বাতিলের সিদ্ধান্ত দেন।
তবে এই মামলার পটভূমিতে আরও বিতর্ক রয়েছে। মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি দুর্নীতি মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। সেই তদন্তে বাধা দিয়ে ডিভিশন বেঞ্চে স্থগিতাদেশ দেন বিচারপতি সেন ও তাঁর সহ-বিচারক। পরে এফআইআর-ও খারিজ করে দেওয়া হয়। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সেই সিদ্ধান্তের আইনি ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিচারপতি সেনের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত স্বার্থে কাজ করার অভিযোগ তোলেন।
তিনি নির্দেশনামায় দাবি করেন, বড়দিনের আগে বিচারপতি সেন বিচারপতি অমৃতা সিংহকে নিজের চেম্বারে ডেকে নিয়ে বলেন, “অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ রয়েছে, তাঁকে বিরক্ত করা যাবে না।” পাশাপাশি, লাইভ স্ট্রিমিং বন্ধ করা এবং নিয়োগ দুর্নীতির মামলাগুলি খারিজ করতে বলেছিলেন বলেও দাবি।
এই ঘটনাগুলোর প্রেক্ষাপটেই বিচারপতি সেনের বেঞ্চ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় সমস্ত শিক্ষা সংক্রান্ত মামলা।
Comments
Post a Comment